রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৮:৫১ পূর্বাহ্ন
মোহাম্মদ সোহেল চট্টগ্রাম থেকেঃ চট্টগ্রাম নগরীর ব্যস্ততম এলাকায় নির্মিত একাধিক ফ্লাইওভার বর্তমানে ভয়াবহ ড্রেনেজ সমস্যার মুখে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই কিংবা ফ্লাইওভার পরিষ্কারের সময় দেখা যায়, উপরের সড়কে জমে থাকা পানি নির্দিষ্ট পাইপলাইনের মাধ্যমে না পড়ে সরাসরি ঝর্ণার মতো নিচের রাস্তায় ঝরে পড়ছে। এতে ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে চলাচলরত হাজার হাজার পথচারী ও যানবাহন আর্তনাদ করছেন দুর্ভোগে।
চোখে দেখা যায়—একটি সুশৃঙ্খল শহরের স্থাপনায় যেখানে পানি নিষ্কাশনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকার কথা, সেখানে চট্টগ্রামের এই ফ্লাইওভারগুলোতে সেই ব্যবস্থার কার্যকারিতা প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। পানি পড়ার স্থানে পাইপ থাকলেও তা হয় অচল, বন্ধ বা সঠিকভাবে সংযুক্ত নয়। ফলে, পানি সোজা নিচে এসে পড়ছে পথচারী ও যাত্রীদের ওপর।
শুধু ভিজে যাওয়াই নয়, অনেক সময় নিচে দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানুষের কাপড় সম্পূর্ণ ভিজে যায়। কারো হাতে থাকা কাগজপত্র, বাজারের ব্যাগ কিংবা অফিসের প্রয়োজনীয় ফাইলও ভিজে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে। কেউ কেউ মোবাইল বা ইলেকট্রনিকস পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথাও জানিয়েছেন। যানবাহনের চালকরাও হঠাৎ ঝরনার মতো পানি পড়ায় বিপাকে পড়েন, ব্রেক কষতে গিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়।
ফ্লাইওভারটির নিচ দিয়ে যাচ্ছিলেন কলেজ ছাত্র মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, “হঠাৎ মাথার উপর থেকে ঝর্ণার মতো পানি পড়ে গেল। পুরো শরীর ভিজে গেল। এখন ক্লাসে কীভাবে বসব বুঝতে পারছি না। এটা কোনো নগর ব্যবস্থাপনা হলো?” একইভাবে একজন রিকশাচালক বলেন, “যাত্রী তুলেছি, সে ভালো জামাকাপড় পরে আছে। হঠাৎ পানি পড়ে যাত্রী ভিজে গেল। আমাকে বলে—তুমি আরেক রাস্তা দিয়ে যাও। কিন্তু আমি যাব কোথায়?”
প্রকৌশল বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরণের সমস্যা সাধারণত হয় যদি পানি নির্গমনের পাইপ বন্ধ হয়ে যায় ঠিকঠাক রক্ষণাবেক্ষণ না করা হয় নির্মাণকালীন সঠিক মান বজায় না রাখা হয় এছাড়াও অনেক সময় পরিকল্পনায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকলেও সেগুলো বাস্তবে কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয় না, বা পরে বর্জ্য জমে অচল হয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক), সিটি কর্পোরেশন বা ফ্লাইওভার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান কেউই সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময় নাগরিক সংগঠনগুলো লিখিতভাবে অভিযোগ করলেও কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি।
ভুক্তভোগী পথচারী ও সচেতন নাগরিকেরা বলছেন, এই সমস্যাটি শুধু ভোগান্তি নয়, এটি একটি জননিরাপত্তার বিষয়। নিচে চলাচলকারী মানুষের মাথায় পানি পড়া থেকে শুরু করে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি পর্যন্ত বাড়ছে। অবিলম্বে ফ্লাইওভারের ড্রেনেজ পাইপগুলো পরিষ্কার, মেরামত এবং পর্যবেক্ষণের জন্য বিশেষ দল গঠনের দাবি তুলেছেন তাঁরা।
নগর ব্যবস্থাপনায় সৌন্দর্য ও আধুনিকতার প্রতীক হয়ে ওঠা ফ্লাইওভারগুলো যদি সাধারণ ড্রেনেজ সমস্যায় জনগণের ভোগান্তির কারণ হয়, তবে তা নিঃসন্দেহে নগর পরিকল্পনার ব্যর্থতা। প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে এই সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া—নচেৎ ‘ঝর্ণা ফ্লাইওভার’ হয়ে উঠবে চট্টগ্রামের আরেক কলঙ্কচিহ্ন।